এর আগের দিন আমরা মুভিং এভারেজ কি এবং কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করবো যে ট্রেডিং এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবথেকে কার্যকরী এবং প্রমাণিত মুভিং এভারেজ স্ট্রাটেজি নিয়ে।
তবে শুরু করার আগে বলে রাখি যে শেয়ার মার্কেট এমন একটি জায়গা যেখানে কেউ ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবেনা যে কোনো শেয়ার বা স্টকের দাম কখন কোনদিকে যাবে। যেকোনো সময় মার্কেট যেকোনো দিকে মুভ করতে পারে।
তবে একজন ট্রেডের হিসাবে শেয়ার মার্কেট থেকে টাকা উপার্জন করতে গেলে আমাদের ১০০% নির্ভুল হতে হবে এমনটা নয়।
এমনকি যদি আমরা কোনো ট্রেডকে সঠিকভাবে ম্যানেজ করতে পারি তাহলে আমাদের শেয়ার মার্কেট থেকে লাভবান হতে গেলে ৫০% নির্ভুলতারও প্রয়োজন নেই।
তো চলুন আর দেরি না করে আজকের স্ট্রাটেজি নিয়ে আলোচনা করি।
মুভিং এভারেজ স্ট্রাটেজি -১(Moving Average Strategy-1)
প্রথম স্ট্রাটেজি তে আমরা দুরকমের মুভিং এভারেজ নিয়ে আলোচনা করবো। প্রথমটি হলো শর্টার পিরিয়ড মুভিং এভারেজ এবং দ্বিতীয়টি হলো লঙ্গার পিরিয়ড মুভিং এভারেজ।
(i ) আমরা কোনো স্টক বা শেয়ার কিনবো (go long) যখন শর্টার পিরিয়ড মুভিং এভারেজ লঙ্গার পিরিয়ড মুভিং এভারেজেকে ক্রস করে উপরে যাবে।
উপরের ছবিতে ১নং পয়েন্টে শর্টপিরিয়ড মুভিং এভারেজ (৫ পিরিওড মুভিং এভারেজ) (লাল রঙের) লংগার পিরিওড মুভিং এভারেজ (১০ পিরিওড মুভিং এভারেজ) কে (নীল রংয়ের)ক্রস করে উপরের দিকে যাচ্ছে। অর্থাৎ পয়েন্ট ১ এ আমরা স্টক কিনতে পারি।(i i ) আমরা কোনো স্টক বা শেয়ার বিক্রি করবো (go short ) যখন শর্টার পিরিয়ড মুভিং এভারেজ লঙ্গার পিরিয়ড মুভিং এভারেজকে ক্রস করে নিচের দিকে যাবে।
শর্টার পিরিয়ড মুভিং এভারেজের লংগার পিরিয়ড মুভিং এভারেজেকে ক্রস করে নিচের দিকে যাওয়াকে বিয়ারিশ ক্রস বা ডেথ ক্রসও বলা হয়।
(i i i ) মুভিং এভারেজ স্ট্রাটেজি ব্যবহার করার সময় আমাদের RSI কে অবশ্যই যোগ করা উচিত। গোল্ডেন ক্রস এর সময় আমরা স্টক বা শেয়ার কিনবো যদি RSI এর মান ৫০ এর উপরে থাকে এবং
একইরকমভাবে ডেথ ক্রস এর সময় RSI এর মান যদি ৫০ এর নিচে থাকে তাহলেই আমরা ওই শেয়ার বিক্রি করবো(short sell )।
ট্রেডার বা ইনভেস্টরদের মধ্যে জনপ্রিয় মুভিং এভারেজ হলো- ৫০, ১০০ এবং ২০০ পিরিয়ড মুভিং এভারেজ।
এবং ইন্ট্রাডে ট্রেডিং(intraday trading) বা শর্টটার্ম ট্রেডিং এর জন্য আমরা ১০ পিরিয়ড এবং ২০ পিরিয়ড মুভিং এভারেজ ব্যবহার করতে পারি।
মুভিং এভারেজ স্ট্র্যাটেজি -২(Moving Average Strategy -2):
এই স্ট্র্যাটেজি তে আমরা তিনটি মুভিং এভারেজ ব্যাবহার করবো। প্রথমটি শর্টটার্ম, দ্বিতীয়টি মিডটার্ম এবং তৃতীয়টি লং টার্ম মুভিং এভারেজ।
এর মধ্যে শরটটার্ম মুভিং এভারেজ কে ব্যাবহার করবো buy বা শেয়ার কেনার সিগনাল পেতে।
শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ যখন মিড টার্ম মুভিং এভারেজকে ক্রস করে উপরে যায় তখন কেনার সিগনাল দিয়ে থাকে এবং যখন শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ মিড টার্ম মুভিং এভারেজকে ক্রস করে নিচের দিকে যায় তখন সেল বা বিক্রির সিগনাল দিয়ে থাকে।
অর্থাৎ, এই স্ট্র্যাটেজি তে শর্ট টার্ম এবং মিড টার্ম মুভিং এভারেজ ব্যাবহার করা হয় কোনো ট্রেডে এন্ট্রি বা এক্সিট সিগনাল পেতে।
এবং লং টার্ম মুভিং এভারেজকে ব্যাবহার করা হয় মার্কেটএর ট্রেন্ড আপ ট্রেন্ড না ডাউন ট্রেন্ড (Up Trend or Down Trend) তা জানার জন্য।
অর্থাৎ, আমরা শেয়ার কিনতে পারি যখন শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ মিড এবং লং টার্ম মুভিং এভারেজ এর ২টি কেই ক্রস করে উপরের দিকে যায়।
এবং আমরা ট্রেড থেকে এক্সিট করবো যখন শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ মিড টার্ম মুভিং এভারেজ কে ক্রস করে নিচের দিকে যায়।
একইরকমভাবে আমরা শেয়ার বিক্রি করবো যখন শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ মিড এবং লং টার্ম মুভিং এভারেজ এর ২টি কেই ক্রস করে নিচের দিকে যায়।
এবং আমরা ট্রেড থেকে এক্সিট করবো যখন শর্ট টার্ম মুভিং এভারেজ মিড টার্ম মুভিং এভারেজ কে ক্রস করে উপরের দিকে যায়।
আমরা উপরে উল্লেখিত দুটি মুভিং এভারেজ স্ট্র্যাটেজিকেই intraday, positional বা long term (buy and hold) এর জন্য ব্যাবহার করতে পারি।
চলুন এবার দেখে নেওয়া যাক উপরে আলোচিত মুভিং এভারেজ স্ট্র্যাটেজি দুটিকে কিভাবে আমরা positional, intraday or day trading এর জন্য ব্যাবহার করতে পারি।
মুভিং এভারেজ স্ট্র্যাটেজি পজিশনাল বা সুইং ট্রেডিং এর জন্য(Moving Average Strategy for Positional or Swing Trading):
Positional বা সুইং ট্রেডিং এর জন্য আমরা ১৪, ২১ এবং ৫০ পিরিওড exponential মুভিং এভারেজ ব্যাবহার করতে পারি।
আপ trending মার্কেটে আমরা কোনো স্টক বা শেয়ার কিনবো যখন ১৪ পিরিওড মুভিং এভারেজ ২১ পিরিওড এবং ৫০ পিরিওড মুভিং এভারেজকে ক্রস করে উপরের দিকে যাবে।
অপরদিকে ডাউন trending মার্কেটে আমরা কোনো স্টক বা শেয়ার বিক্রি করবো( শর্ট সেল) যখন ১৪ পিরিওড মুভিং এভারেজ ২১ পিরিওড এবং ৫০ পিরিওড মুভিং এভারেজ কে ক্রস করে নিচের দিকে যাবে।
এবং উপরের উভয় ক্ষেত্রেই RSI এর মান দেখে আমাদের কনফার্ম হয়ে নিতে হবে।
অনেকে বলতে পারেন যে positional বা সুইং ট্রেডিং এর জন্য কোন টাইমফ্রেম এর চার্ট ব্যাবহার করবো?
সেক্ষেত্রে বলবো Positional ট্রেডিং এর জন্য আমরা hourly চার্ট অর্থাৎ one hour chart ব্যাবহার করতে পারি ট্রেড এ এন্ট্রি বা এক্সিট এর জন্য।
ডে ট্রেডিং বা intraday ট্রেডিং এর জন্য বেস্ট মুভিং এভারেজ সেটিংস ( Best Moving Average Settings for Day Trading or Intraday Trading):
Intraday Trading এ buy এবং sell সিগনাল পাবার জন্য আমরা ৫, ১০ এবং ২০ পিরিওড exponential মুভিং এভারেজ ব্যাবহার করতে পারি।
কোনো আপ ট্রেন্ড এ ৫ পিরিওড EMA যখন ১০ পিরিওড এবং ২০ পিরিওড EMA er উপরে ক্রস করবে তখন শেয়ার কিনতে পারি এবং যখন ৫ পিরিওড EMA ১০ পিরিওড EMA কে ক্রস করে নিচের দিকে যায় তখন ট্রেড থেকে এক্সিট করতে পারি
একইরকমভাবে কোনো ডাউন ট্রেন্ড এ ৫ পিরিওড EMA যখন ১০ পিরিওড ও ২০ পিরিওড EMA কে ক্রস করে নিচের দিকে যায় তখন আমরা শেয়ার বিক্রি করতে পারি এবং যখন ৫ পিরিওড EMA ১০ পিরিওড EMA কে ক্রস করে উপরের দিকে যায় তখন ট্রেড থেকে এক্সিট করবো বা বের হয়ে আসবো।
আগের মতোই কোনো ট্রেড এ ঢোকার আগে RSI এর মান দেখে কনফার্ম হয়ে নিতে হবে।
উপসংহার:
যেহেতু মুভিং এভারেজ স্ট্র্যাটেজি trending মার্কেটে ভালো কাজ করে তাই কোনো ট্রেড এ প্রবেশ করার আগেই আমাদের বুঝে নিতে হবে যে মার্কেট কি অবস্থায় আছে অর্থাৎ মার্কেট trending অবস্থায় আছে না sideway অবস্থায় আছে।
যদি মার্কেট trending ফেজ এ থাকে তবেই মুভিং এভারেজ স্ট্র্যাটেজি ব্যাবহার করবো। কিন্তু যদি মার্কেট trending অবস্থায় না থেকে sideway অবস্থায় থাকে তাহলে মুভিং এভারেজ স্ট্র্যাটেজি ব্যাবহার করবোনা।
কারণ sideway মার্কেটে মুভিং এভারেজ স্ট্র্যাটেজি বার বার False Signal দিতে থাকবে। সেক্ষেত্রে লস হবার সম্ভাবনা খুব বেশি।
No comments:
Post a Comment