আগেই বলে রাখি যে ভালো ট্রেডার হতে গেলে মুভিং এভারেজের ক্যালকুলেশন না জানলেও চলে। মুভিং অ্যাভারেজ কিভাবে কাজ করে সেটা জানলেই কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়।
আমি একটু পরেই বলবো যে মুভিং অ্যাভারেজ কিভাবে কাজ করে। তবে তার আগে মুভিং অ্যাভারেজ কি এবং কেন সে বিষয়ে অল্প বিস্তর আলোচনা করে নিই।
মুভিং অ্যাভারেজ সাধারণত শেষ n বার বা ক্যান্ডেলের closing প্রাইস নিয়ে গণনা করা হয়ে থাকে, যেখানে n হলো ১ থেকে শুরু করে যেকোনো নাম্বার বা সংখ্যা।
প্রথমে শেষ n বার বা ক্যান্ডেলের closing প্রাইসকে যোগ করে n দিয়ে ভাগ করে অ্যাভারেজ বা গড় মান বের করা হয় তারপর ওই মানকে প্রাইস চার্টের উপর প্লট(Plot) করে একটি লাইন পাওয়া যায় যাকে আমরা মুভিং অ্যাভারেজ বলে থাকি।
নিচের ছবিতে লাল রঙের দাগটি হলো SBIN এর ১০ পিরিয়ড মুভিং অ্যাভারেজ যাকে তিনটি লাল রঙের অ্যারো দিয়ে মার্ক করে দেখানো হয়েছে।
এখানে বলে রাখি যে ১০ পিরিয়ড হলো শেষ ১০ টি ক্যান্ডেলের closing প্রাইসের গড় মানকে লাল রঙের লাইনটির উপর প্লট করা হয়েছে।
10 Period Moving Average of State Bank of India Marked by Red Coloured Arrow |
নিচের ছবিটি ভালো করে লক্ষ্য করুন। এখানে ৫ পিরিয়ড মুভিং অ্যাভারেজ নীল রঙের দাগের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।
আগের ১০ পিরিয়ড এর মতোই ৫ পিরিয়ড হলো শেষ ৫ টি ক্যান্ডেলের closing প্রাইসের গড় মানকে নীল রঙের লাইনটির উপর প্লট করা হয়েছে।
5 Period Moving Average of State Bank of India Marked by Blue Coloured Arrow |
মুভিং এভারেজ সাধারণত দুই প্রকার। যথা :
১. সিম্পল মুভিং এভারেজ (Simple Moving Average)
২. এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং এভারেজ(Exponential Moving Average)
এই দুই ধরণের মুভিং এভারেজই ট্রেন্ডিং মার্কেটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। দুজনেই কোনো ট্রেন্ডের শেষ অবধি থাকতে সাহায্য করে থাকে।
কিন্তু এদের দুজনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো যে এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং এভারেজ সিম্পল মুভিং এভারেজের থেকে প্রাইসের প্রতি বেশি সংবেদনশীল বা sensitive.
অর্থাৎ EMA বা এক্সপোনেনশিয়াল মুভিং অ্যাভারেজ, SMA বা সিম্পল মুভিং এভারেজের চেয়ে দামের প্রতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায় বা খুব তাড়াতাড়ি প্রাইসের সাথে সাথে মুভ করতে থাকে।
নিচের ছবিটি ভালো করে খেয়াল করে দেখুন তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে।
20 Period SMA and 20 Period EMA's movement to Price ২০ পিরিয়ড EMA (লাল রঙের) ২০ পিরিয়ড SMA (নীল রঙের ) এর তুলনায় একটু তাড়াতাড়ি শেয়ারের দামের সাথে সাথে মুভ করছে। মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে ট্রেডে এন্টি এবং এক্সিট(Enty and Exit in a Trade Using Moving Average): ট্রেন্ডিং মার্কেটে মুভিং এভারেজ ব্যাবহার করে আমরা কোনো ট্রেডে এন্ট্রি অর্থাৎ প্রবেশ করতে বা কোনো ট্রেড থেকে এক্সিট অর্থাৎ বের হয়ে আসতে পারি। সাধানভাবে, যখন কোনো স্টক বা শেয়ারের দাম মুভিং এভারেজ এর উপরে যায় অর্থাৎ মুভিং এভারেজ এর উপরে ক্রস করে তখন আমরা কোনো ট্রেডে এন্ট্রি অর্থাৎ প্রবেশ করতে পারি বা শেয়ার কিনতে পারি। এবং স্টক বা শেয়ারের দাম যখন মুভিং এভারেজ এর নিচে যায় বা নিচে ক্রস করে তখন আমরা ট্রেড থেকে এক্সিট অর্থাৎ বেরিয়ে আসতে পারি বা শেয়ার বিক্রি করতে পারি। উপরের ছবিটি ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন যে মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে কিভাবে আমরা কোনো স্টক বা শেয়ার কিনতে বা বেচতে পারি। ছবিতে শেয়ারের দাম যখন মুভিং এভারেজের উপরে যাচ্ছে (ছবিতে No. 1) তখন আমরা শেয়ার কিনবো এবং যখন শেয়ারের দাম মুভিং এভারেজের নিচে যাচ্ছে(ছবিতে No.2) তখন আমরা শেয়ার বিক্রি করবো। মুভিং এভারেজ মেথডের সুবিধা এবং অসুবিধা(Moving Average Method Advantages and Disadvantages): আমরা এতক্ষণে জেনে গেছি যে মুভিং এভারেজ সবথেকে ভালো কাজ করে trending মার্কেটে। এমনকি কোনো ট্রেন্ডের শেষ অবধি থাকতে সাহায্য করে। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি যে কোনো ট্রেন্ড এ বেশি সময় থাকতে গেলে মুভিং এভারেজ হলো খুবই মূল্যবান একটি টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটর। উদাহরণ হিসাবে যদি আমরা উপরের ছবিটি নিয়ে থাকি এবং No.1 এ পয়েন্টে যদি আমরা ৫০০ টি SBIN এর শেয়ার কিনে থাকি এবং No.২ এ যদি ৫০০ টি শেয়ার বিক্রি করে থাকি তাহলে আমাদের কি পরিমান লাভ হয় একটু হিসাব করে দেখে নিই। No.1 এ শেয়ারের দাম হলো ৪৫৪ টাকা এবং No.2 এ শেয়ারের দাম হলো ৪৭২ টাকা। অর্থাৎ ১ টা শেয়ার এ লাভ হচ্ছে ১৮ টাকা এবং ৫০০ টি শেয়ারে লাভ হচ্ছে (৫০০*১৮)=৯০০০ টাকা। এই অল্প সময়ের মধ্যে ৯০০০ টাকা লাভ, খুব একটা খারাপ নয়। তবে মুভিং এভারেজ যেহেতু একটি lagging ইন্ডিকেটর তাই কোনো sideway মার্কেটে মুভিং এভারেজ ব্যাবহার করা খুবই বিপদজনক যদি না sideway মার্কেটে এর ব্যাবহার ঠিকমতো জানা না থাকে। কারণ sideway মার্কেটে মুভিং এভারেজ খুব ঘন ঘন কেনা এবং বেচার সিগনাল (buying and selling signal) দিয়ে থাকে যার ফলে ঘন ঘন লসের সম্মুখীন হতে হয়। উপসংহার: ট্রেন্ডিং মার্কেটে মুভিং এভারেজ খুবই সাহায্যকারী একটি টেকনিক্যাল ইনডিকেটর। তবে sideway বা চপি মার্কেটে শুধুমাত্র মুভিং এভারেজ ব্যবহার করে ট্রেড করা খুবই বিপদজনক। মুভিং এভারেজ এর সাথে অন্য কোনো ইনডিকেটর (যেমন RSI) ব্যবহার করে buying বা selling সিগন্যাল কন্ফার্ম হয়ে নেওয়া উচিত। আমি অন্য কোনো পোস্ট এ কিভাবে RSI বা MACD Indicator ব্যবহার করে মুভিং এভারেজের buying বা selling সিগন্যাল কন্ফার্ম হতে হয় সে বিষয়ে লিখবো। তবে আপনাদের এ বিষয়ে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট এ জানাতে পারেন বা ভালো কোনো উপদেশ দিতে পারেন। |
This comment has been removed by the author.
ReplyDelete